অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর হওয়ার লড়াইয়ে বড় ধরনের এক সাফল্যের দেখা পেয়েছে চীন। দেশটির গবেষকরা অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে একটি ‘এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট’ (EUV) লিথোগ্রাফি মেশিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন। আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপ তৈরির জন্য এই প্রযুক্তিকে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

চীনের শেনঝেনের একটি গবেষণাগারে তৈরি এই মেশিনটির নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালের শুরুতে শেষ হয়। বিশাল আকৃতির এই যন্ত্রটি একটি কারখানার পুরো ফ্লোর জুড়ে জায়গা নেয়। যদিও মেশিনটি প্রাথমিক পর্যায়ে EUV আলো উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে, তবে এটি দিয়ে কার্যকর চিপ তৈরির কাজ এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি।

বিস্ময়কর এই প্রকল্পটিকে চীনের নিজস্ব ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। মার্কিন পারমাণবিক প্রকল্পের আদলে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে পরিচালিত এই উদ্যোগে সরাসরি চীনা সরকার সমর্থন দিচ্ছে এবং প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে এতে সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্পে বর্তমানে হাজার হাজার দক্ষ প্রকৌশলী কাজ করছেন।

তথ্যমতে, এই অসাধ্য সাধনে চীন অবসরপ্রাপ্ত বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রবাসী চীনা প্রকৌশলী এবং ডাচ কোম্পানি ASML-এর সাবেক কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছে। পাশাপাশি পুরোনো পশ্চিমা যন্ত্রাংশ পুনঃব্যবহার এবং বড় ধরনের সরকারি আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে প্রকল্পের গতি ত্বরান্বিত করা হয়েছে।

তবে বৈশ্বিক চিপ বাজারের শীর্ষস্থানে থাকা ডাচ কোম্পানি ASML-এর তুলনায় চীন নির্ভুল অপটিক্স ও দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে এখনো বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। চীনের লক্ষ্য ২০২৮ সালের মধ্যে কার্যকর EUV প্রযুক্তি তৈরি করা হলেও, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে এর পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও একটি কার্যকর EUV প্রোটোটাইপ তৈরি করতে পারা চীনের জন্য বড় কৌশলগত বিজয়। এটি প্রমাণ করে যে, চীন পশ্চিমা চিপ প্রযুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, যা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর প্রতিযোগিতার সমীকরণ বদলে দিতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts