আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫
দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক টানাপোড়েন অবসানে এক বড় ধরনের নীতি পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে তুরস্ক। রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা S-400 মস্কোকে ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা করছে আঙ্কারা। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং স্থগিত হওয়া F-35 যুদ্ধবিমান কর্মসূচিতে পুনরায় ফিরে যাওয়াই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
এরদোয়ান-পুতিন আলোচনা ও গুঞ্জন
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে তুর্কমেনিস্তানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। সেখানে তিনি S-400 ব্যবস্থাটি রাশিয়ার কাছে ফেরত পাঠানোর এবং এর বিপরীতে দেওয়া অর্থ জ্বালানি খাতের পাওনার সঙ্গে সমন্বয় করার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও ক্রেমলিন এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোনো আলোচনার খবর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।

প্রেক্ষাপট: কেন এই জটিলতা?
২০১৯ সালে আঙ্কারা রাশিয়ার কাছ থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলারে S-400 কেনার পর থেকেই ন্যাটোর প্রধান সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশটির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ওয়াশিংটন দাবি করেছিল, রুশ এই ব্যবস্থা ন্যাটোর প্রযুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক এবং এটি F-35 যুদ্ধবিমানের গোপনীয়তা ফাঁস করতে পারে। ফলস্বরূপ:
- তুরস্ককে হাই-টেক F-35 কর্মসূচি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
- CAATSA আইনের অধীনে তুরস্কের ওপর কঠোর প্রতিরক্ষা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে আঙ্কারা ওয়াশিংটনের সাথে দ্রুত একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চায়। সম্প্রতি আঙ্কারায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক জানিয়েছিলেন যে, আগামী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে এই সংকটের সমাধান হতে পারে। তুরস্কের এই সম্ভাব্য পদক্ষেপের পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে: ১. প্রতিরক্ষা সক্ষমতা: F-35-এর মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বহরে যুক্ত করে নিজেদের বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়ন করা। ২. অর্থনৈতিক সমন্বয়: S-400-এর জন্য ব্যয় করা বিশাল অঙ্কের অর্থ রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে কাটাকাটি করে সমন্বয় করা।
তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান
তবে এই খবর নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশাও রয়েছে। তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, S-400 নিয়ে তাদের অবস্থানে এখনও কোনো “প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন” আসেনি। তারা ঘরোয়া প্রযুক্তিতে নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির দিকেও জোর দিচ্ছে।
যদি শেষ পর্যন্ত তুরস্ক এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে, তবে এটি হবে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বড় ভূ-রাজনৈতিক মোড়। এটি একদিকে যেমন ন্যাটোতে তুরস্কের অবস্থান শক্তিশালী করবে, অন্যদিকে মস্কোর সাথে আঙ্কারার সম্পর্কে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।



