চীনে বহুল আলোচিত শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এতে রাশিয়া ও বেলারুশের প্রেসিডেন্টসহ ইউরেশিয়ার দুই ডজন নেতা যোগ দেন। 

আঞ্চলিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে বেইজিংকে তুলে ধরতে এই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিয়ানজিন থেকে এএফপি জানায়, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)’র এই শীর্ষ সম্মেলন উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরনগরী তিয়ানজিনে রোববার শুরু হয়। এর কয়েকদিন পরই রাজধানী বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ৮০ বছর উপলক্ষ্যে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।

এসসিও’র সদস্য দেশগুলো হলো- চীন, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ। এছাড়াও, আরও ১৬টি দেশ পর্যবেক্ষক বা ‘সংলাপ সহযোগী’ হিসেবে এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

এই শীর্ষ সম্মেলনের সব নেতা সোমবার প্রথমবারের মতো একত্রিত হবেন। সমাবেশটি ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠান’ হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে সি চিন পিং একটি ভাষণও দেবেন।

রোববার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তিয়ানজিনে পৌঁছান। তার সঙ্গে ছিলেন শীর্ষ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল।

সি বিভিন্ন নেতার সঙ্গে একের পর এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। এর মধ্যে ছিলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো, যিনি পুতিনের একজন কট্টর মিত্র এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি ২০১৮ সালের পর প্রথমবার চীন সফর করছেন।

মোদি সি-কে জানান, ভারত ‘পারস্পরিক বিশ্বাস, মর্যাদা ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

বিশ্বের এই দুই জনবহুল দেশ দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রভাব বিস্তারে একে অপরের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২০ সালে তাদের মধ্যে সীমান্তে এক প্রাণঘাতী সংঘর্ষও হয়েছিল।

তবে গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে মোদী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সি-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর থেকে তাদের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে।

সম্মেলনের নিরাপত্তার অংশ হিসেবে তিয়ানজিনের বড় একটা অংশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশও মোতায়েন করা হয়।

এসসিও’র প্রচারণার পোস্টার দিয়ে রাস্তার দু’পাশ সাজানো হয়েছে। এতে চীনা ও রুশ ভাষায় লেখা আছে— ‘পারস্পরিক সুবিধা’ ও ‘সমতা’।

চীন ও রাশিয়া মাঝে মাঝে এসসিও-কে ন্যাটো সামরিক জোটের বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এ বছরের শীর্ষ সম্মেলনটি প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

২০০১ সালে এসসিও প্রতিষ্ঠার পর এবারই জোটটির সবচেয়ে বড় আসর বসেছে। এতে যোগ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানসহ ২০জনের বেশি শীর্ষ নেতা।

পুতিন সোমবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন। সেখানে যথাক্রমে ইউক্রেন সংঘাত এবং তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে।

সম্মেলনে আমন্ত্রিত অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি বুধবার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় সামরিক কুচকাওয়াজ দেখতে যাবেন। ওই অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনও উপস্থিত থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts