জেরুজালেম ১৬ সেপ্টেম্বর : দীর্ঘদিনের হুমকির পর অবশেষে গাজা নগরীতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “গাজা জ্বলছে”। তিনি জানান, আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) সন্ত্রাসী অবকাঠামোর ওপর “লোহা মুঠির” আঘাত হানছে এবং হামাসের বিরুদ্ধে লড়ছে।
ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, গাজা নগরীতে এখনও প্রায় ৩ হাজার হামাস যোদ্ধা সক্রিয় রয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে আরও সেনা মোতায়েন করা হবে।
হতাহতের খবরে শোক, ধ্বংসস্তূপে লাশ উদ্ধার
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই গাজা নগরীর বাসিন্দা। রাতের আঁধারে বহুতল আবাসিক ভবনে হামলার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধারে স্বজনরা হাহাকার করছে। এক নারীর মরদেহ কয়েক ঘণ্টা পরও কংক্রিটের নিচে আটকে ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

মানুষের দুর্ভোগ, পালিয়ে দক্ষিণে যাত্রা
ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক মানুষদের গাজা নগরী ছাড়ার আহ্বান জানালেও অনেকে বলেছেন, “এটা মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে মৃত্যুর দিকেই যাওয়া”। তবুও হাজারো মানুষ গরুর গাড়ি, রিকশা, ভ্যান কিংবা হেঁটে দক্ষিণের দিকে ছুটছে।
হামাস দাবি করেছে, পূর্ব গাজা থেকে প্রায় ৩.৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, আর পুরো গাজা নগরী থেকে প্রায় ১.৭৫ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের শরণার্থী শিবিরগুলো এখন আরও বেশি ভিড়ে পূর্ণ হয়ে উঠছে, যেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য ও ওষুধ নেই।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, হামাস যদি জিম্মিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তবে তাদের “ভয়াবহ মূল্য” দিতে হবে।
- অপরদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে ইসরায়েলের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে।
- ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযানে উদ্বেগ প্রকাশ করে এটিকে “বেপরোয়া ও ভয়াবহ” বলেছেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
- জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার শামিল। ইসরায়েল এই অভিযোগকে “ভুয়া ও কেলেঙ্কারিমূলক” আখ্যা দিয়েছে।
সেনাদের দ্বিধা ও জিম্মি পরিবারের ক্ষোভ
ইসরায়েলের কিছু সেনা কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই অভিযানে জিম্মিদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। এমনকি আইডিএফের প্রধান ইযাল জামিরও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতির পথে এগোতে বলেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
জিম্মি পরিবারগুলো নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছে। তাদের একজন, আনাত অ্যাংগ্রেস্ট বলেছেন, “আমাদের প্রিয়জনেরা গাজায় বন্দী অবস্থায় আইডিএফের হামলার শিকার হচ্ছে।”



